প্রসঙ্গিক তথ্য
সাধারণত কলার যৌন পদ্ধতিতে বা বীজ হতে বংশবিস্তার করা হয় না। কলা গাছের গোড়া থেকে যে তেউর (সাকার বের হয় তা দিয়ে এর বংশ বিস্তার করা হয়ে থাকে। কলার অসি চারা ও পানি চারা এই দু'ধরনের তেউড় বা চারা পাওয়া যায়। রোপণের জন্য অসি চারা উত্তম । কারণ রোপণের পর এগুলো কম মরে এবং দ্রুত প্রতিষ্ঠিত হয় । তবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর উভয় প্রকার চারার মধ্যে ব্যবধান থাকে না। কলার চারা অনেক বড় হওয়ার পরও রোপণ করা চলে তবে ছোট আকারের চারা উৎকৃষ্ট। ৩৫-৫০ সে.মি. দীর্ঘ ও পুরু গোড়া বিশিষ্ট চারা রোপণের জন্য সর্বোৎকৃষ্ট।
উপকরণ
(১) চারা (২) সার (জৈব ও রাসায়নিক) (৩) কীটনাশক (৪) ছত্রাকনাশক (৫) প্রে যন্ত্র (৬) পানি (৭) লাঙল (৮) জোয়াল (৯) মই (১০) মুগুর (১১) খুরপি (১২) কোদাল (১৩) ছুরি (১৪) পলিথিন (১৫) খুঁটি (১৬) রশি (১৭) ঝুড়ি (১৮) ঝাঝরি ।
কাজের ধাপ
১। কলার উন্নত জাত নির্বাচন করুন । প্রয়োজনীয় চারা (৫৩৮-১২১০ টি/একরে) সংগ্রহ করুন ।
২। কলা চাষের জন্য বন্যামুক্ত উঁচু স্থান এবং সুনিষ্কাশিত উর্বর পেঁআশ / এঁটেল দোআশ মাটি নির্বাচন করুন ।
৩ । সংগৃহীত চারা থেকে কীট/রোগাক্রান্ত বা খারাপ চারা বেছে ফেলে ৫০-৬০ সি.মি লম্বা ও ১.৫-২.৫ কেজি রাইজোম যুক্ত ভাল চারা নির্বাচন করুন । সম্ভব হলে শুধু অসি চারা নির্বাচন করুন। নির্বাচিত চারার সমস্ত শিকড় ছুরি দিয়ে কেটে চারা রোপণের জন্য প্রস্তুত করুন ।
৪ । কলার জমি উত্তমরূপে লাঙল দিয়ে ৫/৬টি চাষ ও মই দিন মুগুর দিয়ে ঢেলা ভেঙে দিন ও হাতে আগাছা বেছে ফেলুন এবং মাটি সমতল করে তৈরি করুন ।
৫ । কলার জন্য ২-৩ মি. দূরত্বে ৭৫ সে.মি চওড়া এবং ৬০ সে.মি গভীর করে কোদাল দিয়ে) একর প্রতি জাত অনুসারে (৫৩৮-১২১০টি গর্ত তৈরি করুন । গর্ত সপ্তাহকাল খোলা অবস্থায় রেখে দিন । এরপর গর্তের মাটির সাথে ১৫ কেজি জৈব সার, খৈল ৫০০ গ্রাম, টিএসপি ৩০০ গ্রাম, মিশিয়ে গর্ত ভরাট করে রাখুন । গর্ত ভরাট করার সময় উপরের মাটি নিচে এবং নিচের মাটি উপরে দিন।
৬। গর্তে সার প্রয়োগের পর ঝাঝরি দিয়ে সেচ দিন। মাটি উলট-পালট করে দিন। রোপণের দুই দিন পূর্বে পুনরায় মাটি উলট-পালট করে দিন । প্রতি গর্তে একটি করে চারা রোপণ করুন । রোপণকৃত চারার রাইজোম ১০-১৫ সে.মি, মাটির গভীরে স্থাপন করুন এবং উপ-কাণ্ড মাটির বরাবর বা সামাণ্য (১.৫-২.০ সে.মি) নিচে রাখুন ।
৭। চারা রোপণের পর মাটি ভালভাবে চেপে দিন। বয়স্ক গাছে বছরে ৪-৬ বার আগাছা বেছে দিন । সেচের পর জমিতে জো এলে চটা ভেঙে দিন এবং মাটি আলগা রাখুন । এরপর প্রতিটি সারির মাঝে ৩০ সে.মি চওড়া ও ২০ সে.মি গভীর নালা (কোদাল দিয়ে তৈরি করুন । এসব নালার মাটি তুলে গাছের সারি বরাবর বেড তৈরি করে দিন । এভাবে সেচ ও নিকাশের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করুন ।
৮। জমিতে চারা রোপণের ২ মাস পর গাছ প্রতি ৮০ গ্রাম ইউরিয়া ও ১৬০ গ্রাম এমপি সার উপরি প্রয়োগ করুন এবং ৪-৫ মাসপর ১৬০ গ্রাম ইউরিয়া ও ১৬০ গ্রাম এমপি পুনরায় প্রয়োগ করুন । গাছের ৩০ সে.মি জায়গায় মাটি গোলাকার (বেন্ড) করে খুরপি । কোদাল দিয়ে আলগা করুন । সার ছিটিয়ে ভালভাবে মাটির সাথে মিশিয়ে দিন । রসের অভাব থাকলে সেচ দিন । চারা অবস্থায় ঝাঝরি দিয়ে এবং বড় গাছে ড্রেন পূর্ণ করে পানি দিয়েই সেচের কাজ চালাতে পারেন। বর্ষাকালে অতিরিক্ত পানি নিকাশের ব্যবস্থা করুন।
৯ । চারা জমিতে রোপণের ৪-৫ মাস পর থেকেই সাকার বের হতে থাকে । এসব সাকার বের হওয়ার সাথে সাথে মাটি বরাবর (ছুরি/কান্তে দিয়ে কেটে দিন। গাছে ফল পরিপক্ক না হওয়া পর্যন্ত এভাবে সাকার কাটতে থাকুন । মুড়ি ফসল করতে চাইলে গাছে ফুল আসার পর একটি অসি চারা রেখে দিন (চিত্র দ্রষ্টব্য)। গাছে কাঁদি বের হলে প্রতিটি গাছে খুঁটি পুতে রশি দিয়ে শক্ত করে বেঁধে দিন ।
১০। গাছের পচা, রোগাক্রান্ত পাতা কেটে ফেলে বাগান পরিষ্কার রাখুন। কাঁদি বের হওয়ার পর (পুরুষ ফুলসহ) ঝুলন্ত মোচাটি কেটে ফেলুন।
১১ । বিটল পোকা দমনের জন্য (১) বাগান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও আগাছামুক্ত রাখুন, (২) প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৪-৫ চা চামচ ম্যালাথিয়ন-৫৭ তরল ডায়াজিনন ৬০ তরল কীটনাশক গুলে ১০-১৫ দিন পর পর (পাতা ও ফলে) ভালোভাবে স্প্রে করুন, (৩) ২-৩ বছর শস্য পর্যায় করুন। (৪) কাদি ব্যাগিং করুন ।
১২ । ঘোড়া পোকা ও জাব পোকা দমনের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করুন ।
১৩। রাস্ট এবং থ্রিপস দমনের জন্য- (১) রঙিন পলিথিন ব্যাগে কঁদি ঢেকে দিন, (২) পক্ষকাল পরপর তামাক চূর্ণ ছিটাতে পারেন এবং (৩) ১১ (২) এর অনুরূপ ব্যবস্থা নিন ।
১৪ । কাগু/গুড়ির উইভিল পোকা দমনের জন্য (১) আক্রান্ত গাছের খালে, কাণ্ড, গুড়ি তুলে এনে ধ্বংস করুন, (২) ২-৩ বছর (অমৃত সাগর/চাঁপা কলার চাষ না করা), শস্য পর্যায় করুন, (৩) ১১ (২) এর অনুরূপ ব্যবস্থা নিন ।
১৫ । পানামা রোগ দমন- (১) আস্ত গাছ, পাতা, চারা, কাণ্ড তুলে পুড়িয়ে ফেলুন। গর্তের মাটি পাড়ান, (২) ৩-৪ বছরের জন্য (সাগর, মেহের সাগর, সবরী, চাপা কলার চাষ না করা) শস্য পর্যায় অবলম্বন করুন ।
১৬ । গুচ্ছমাথা রোগ (বানচীটপ) দমনে- (১) আক্রান্ত গাছ উঠিয়ে পুড়িয়ে ফেলুন, (২) ১১ (২) এর অনুরূপ ব্যবস্থা নিন ।
১৭। সিগাটোগা (পাতার দাগ) দমনে- (১) আক্রান্ত পাতা সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলুন, (২) আধুনিক উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করুন (আগাছা বালাইনিকাশের ব্যবস্থাসহ), (৩) জৈব সার অধিক ব্যবহার করুন, (৪) প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৪০-৪৫ গ্রাম ডাইথেন এম-৪৫ গুলে গাছে ভালভাবে স্প্রে করে দিন ।
১৮ । প্রধান কাগু পচা রোগ দমনে প্রতি ১০ লিটার বার্গান্ডি মিকচার প্রে মেশিনে ভরে (৯৬ গ্রাম তুঁতে, ১২০ গ্রাম কাপড় ধোয়ার সোডা ও ১৯ লিটার পানি) পক্ষকাল পরপর ছিটান ।
১৯। রোপণের ১০-১৪ মাস সময়ের মধ্যেই ফল সংগ্রহ করতে পারেন। ফল যখন পুষ্ট, গোলাকার (কিনারাবিহীন হয়) ও পুষ্প শুকিয়ে যায় তখন কলার কাদি কেটে সংগ্রহ করুন। সংগ্রহের পর পচা, কীট ও রোগে আক্রান্ত এবং অপুষ্ট কলা বাছাই করে ফেলুন । দূরে পাঠাতে অর্থ পত্ব এবং কাছে পাঠাতে বাছাই করুন । পরিপক্ক কলা খোলা ও ঠান্ডা স্থানে (কাচা কলা) কাদি ঝুলিয়ে, কাদির গোড়ায় মোমের প্রলেপ দিয়ে বা হিমাগারে (১১ সে, তাপে) কয়েকদিন সংরক্ষণ করতে পারেন ।
সতর্কতা
১। কীট ও রোগবিহীন বাগান থেকে (অসি) চারা সংগ্রহ করতে হবে ।
২। যে সমস্ত এলাকায় শীতের তীব্রতা বেশি সেখানে শীতের পূর্বে চারা লাগালে ফুল/ফুল আসতে ২-৩ মাস দেরি হতে পারে ।
৩। কলার জন্য নিকাশের ভাল ব্যবস্থা এবং নিড়ানীকালে যাতে শেকড় না কাটে সেদিক দৃষ্টি রাখতে হবে । এবারে কাজের ধাপ অনুসরণ করে ব্যবহারিক খাতায় লিখুন ।
Read more